06 May 2024, 11:24 am

মুনাফিকের পরিচয় সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদীসে রসুল (সঃ) এর বাংলা অর্থ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

“মহান আল­াহ তোমাদেরকে যাবতীয় আমানত তার মালিকের কাছে পৌছে দেয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন।” (সূরা ঃ নিসা ঃ আয়াত ঃ ৫৮)
“আমরা এ আমানত আসমানসমূহ যমীন ও পাহাড় -পর্বতের সামনে পেশ করলাম, তারা এটা বহন করতে প্রস্তুত হল না, বরং তারা ভয় পেল। কিন্তু মানুষ তা নিজের ঘাড়ে তুলে নিল। মানুষ যে বড় জালিম ও মূর্খ তাতে সন্দেহ নেই।” (সূরা ঃ আহযাব ঃ আয়াত ঃ ৭২)

১. হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল­াহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রসুলুল­াহ সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম বললেন, মুনাফিকের চিহ্ন হল ৩টি। যখন সে কথা বলবে তখন মিথ্যা বলবে, যা ওয়াদা করবে তার বিপরীত কাজ করবে এবং কোন কিছু আমানত রাখলে তার খিয়ানত করবে। ইমাম বোখারী ও ইমান মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অন্য এক রেওয়াতে আরো আছে- সে যদি রোযা নামায করে থাকে এবং নিজেকে মুসলমান বলে ধারণা করে থাকে তবুও সে মুনাফিক।
২. হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রাদিয়াল­াহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-রসুলুল­াহ সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম আমাদেরকে দু’টি কথা বলেন, তার মধ্যে একটি তো আমি দেখেই নিয়েছি আর দ্বিতীয়টির জন্য অপেক্ষা করছি। রসুলুল­াহ সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম আমাদেরকে বলেন, প্রথমত মানুষের অন্তরের অন্তস্থলে আমানতকে বিশ্বস্ততা ঢেলে দেয়া হল, অতঃপর কোরআন নাযিল করা হল। তারা কোরআনকে জানল এবং হাদীসকেও চিনল। অতঃপর তিনি রসুলুল­াহ সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম আমাদের কাছে আমানত ও বিশ্বস্ততাকে তুলে নেয়ার ব্যাপারে আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, মানুষ চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী ঘুমিয়ে পড়বে আর তার অন্তর হতে আমানতি ও বিশ্বস্ততা তুলে নেয়া হবে। অতঃপর তার মধ্যে এর ক্ষীণ প্রভাব অবশিষ্ট থাকবে। সে পুনরায় স্বাভাবিক অভ্যাস অনুযায়ী ঘুমিয়ে পড়বে, তার অন্তর হতে বিশ্বস্ততার বাকি প্রভাবটুকুও তুলে নেয়া হবে। অতঃপর অন্তরের মধ্যে একটি ফোস্কার মত চিহ্ন বাকি থাকবে।  যেমন তুমি তোমার পায়ের ওপর আগুনের স্ফুলিংগ রাখলে এবং তাতে চামড়া পুড়ে ফোস্কা পড়ল। বাহ্যত স্থানটি ফোলা দেখাবে, কিন্তু এর মধ্যে কিছুই নেই। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি তা কাঁকর উঠিয়ে নিজের পায়ের ওপর মারতে লাগলেন। রসুলুল­াহ সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম বলেন, এমতাবস্থায় তাদের সকাল হবে এবং তারা ক্রয়-বিক্রয়ে লিপ্ত হবে তাদের মধ্যে আমানত রক্ষা করার মত একটি লোকও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমন কি বলা হবে অমুক বংশে একজন বিশ্বস্ত লোক আছে। এ সময়ে তাকে পার্থিব বিষয়ে পারদর্শী হওয়ার কারণে বলা হবে, লোকটি কত হুশিয়ার, চালাক, স্বাস্থ্যবান, সুন্দর এবং বুদ্ধিমান। অথচ তার মাঝে সরিষার দানার পরিমাণ  ঈমানও  থাকবে না। রাবী হুযায়ফা  রাদিয়াল­াহু আনহু বলেন, আজ আমি এমন এক যুগে এসে পড়েছি যে, কার সঙ্গে ক্রয়-বিক্রয় করছি তার কোন বাছ-বিচার নেই। কেননা, যদি সে খ্রিষ্টান অথবা ইয়াহুদী হয়, তবে তার দায়িত্ব আমার হক তার কাছ হতে আদায় করে দেবে। আজ আমি তোমাদের কারোর সঙ্গে ক্রয়-বিক্রয় করব না। শুধু অমুক লোকের সঙ্গে করব। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৩. হযরত হুযায়ফা ও হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল­াহু আনহু হতে বর্ণিত, তারা উভয়ে বললেন, রসুলুল­াহ সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম ইরশাদ করেন, মহান প্রাচুর্যময় মহান আল­াহ হাশরের দিন সমস্ত মানুষকে একত্রিত করবেন। তখন ঈমানদার লোকজন উঠে দাড়াবে। এ অবস্থায় তাদের সন্নিকটে বেহেশ্ত আনা হবে। অখন তারা আদম আলাইহিস সালামের কাছে গিয়ে বলবে, হে আমাদের পিতা, আমাদের জন্য বেহেশতের দরজা খুলে দিন। তিনি বলবেন তোমাদের পিতার অপরাধই তো তোমাদেরকে বেহেশ্ত হতে বহিস্কার করেছে। আমি এ দরজা খোলার উপযুক্ত নই। তোমরা আমার ছেলে ইব্রাহীম খলীলুল­াহর কাছে যাও।  রসুলুল­াহ সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম বলেন, অতঃপর তারা ইব্রাহীমের (আ) কাছে আসবে। হযরত ইব্রাহীম (আ) বলবেন, আমি এ কাজের উপযুক্ত নই। আমি তো শুধু বিনয়ী খলীল ছিলাম। তোমরা বরং মুসা (আ) এর কাছে যাও, মহান আল­াহ তার সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা ছুটে হযরত মুসা (আ) এর কাছে আসবে। তিনি বলবেন, আমি এর উপযুক্ত নই।  তোমরা ঈসার (আ) এর কাছে যাও। তিনি তো মহান আল­াহর কালেমা ও রূহুল­াহ। হযরত ঈসা (আ) বলবেন, বেহেশ্তের দরজা খোলার মত যোগ্যতা আমার নেই। পরিশেষে তারা রসুলুল­াহ সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম-এর কাছে ছুটে আসবে। তিনি উঠে দাড়াবেন। তাকে শাফাআত করার অনুমতি দেয়া হবে। আমানত এবং দয়া অনুগ্রহকেও ছেড়ে দেয়া হবে। এরা পুলসিরাতের ডানে বায়ে দু’দিকে দাড়িয়ে যাবে। তোমাদের মধ্যে প্রথম দলটি বিদ্যুৎ বেগে পুলসিরাত পার হয়ে যাবে আমি হুযায়ফা অথবা আবূ হুরায়রা বললাম হে মহান আল­াহর রসূল। আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। বিদ্যুৎ বেগে পার হওয়ার তাৎপর্য কি? তিনি বললেন, তোমরা কি বিদ্যুৎ দেখনি? পলকের মধ্যে তা চলে যেতে পারে। অতঃপর বাতাসের গতিতে পাখির গতিতে এবং দ্রুত দৌড়ের গতিতে পর্যায়ক্রমে পুলসিরাত পার হবে। এ পার্থক্য তাদের কাজ কর্মের কারণেই হবে। এ সময় তোমাদের রসুলুল­াহ সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম পুলসিরাতের ওপর দাড়িয়ে বলতে থাকবেন, হে প্রভু। শান্তি বর্ষণ করুন। এভাবে বান্দাদের সৎকাজের পরিমান কম হওয়াতে তারা অগ্রসর হতে থাকবে। পুলসিরাতের উভয় দিকে কিছু লোহার আকড়া লটকানো থাকবে। যাকে আটক করার নির্দেশ দেয়া হবে এগুলো আটক করবে। যার গায়ে শুধু আচড় লাগবে সে মুক্তি পাবে। আর অন্য সবগুলোকে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে। বর্ণনাকারী আবূ হুরায়রা বলেন, সেই সত্ত¡ার কসম যার হাতে আবূ ইরায়রার প্রাণ। দোযখের গভীরতা সত্তর বছরের পথের দূরত্ব সমান। (মুসলিম শরীফ)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 2590
  • Total Visits: 700674
  • Total Visitors: 2
  • Total Countries: 1125

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ সোমবার, ৬ই মে, ২০২৪ ইং
  • ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
  • ২৬শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ১১:২৪

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018